চট্টগ্রামে আটক পাঁচ জঙ্গির মধ্যে যশোরের মণিরামপুরের নাজিম উদ্দীন আল আজাদ ওরফে নকশা নাজিম ছোট বেলা থেকেই ছিলো অনেকটা ডানপীটে। স্কুল-কলেজ পড়ুয়া নাজিম খুব অল্প সময়ের মধ্যে ধর্মীয় অনুশানের প্রতি দূর্বল হয়ে পড়ে। নাজিমের পিতা উপজেলার ভরতপুর গ্রামের হাসান গাজী ছিলেন স্থানীয় জনতা ব্যাংকের নাইটগার্ড। তার ১ মেয়ে আর ২ ছেলের মধ্যে নাজিম মেঝ। ভাই বোনের মধ্যে সবার বড় বোন বিবাহিত। ভাইদের মধ্যে নাজিম বড়। অপর ছোট ভাই আজিম ভাড়ায় মোটরসাইকেল চালায়। ছাত্রদলের রাজনীতির সাথে জড়িত বাজারে উগ্রতার সাথে চলাফেরা করা ছেলে নাজিম হঠাৎ করেই ধর্মীয় অনুশাসনে বন্দি হয়ে পড়ে। বন্ধু হাসান সমীর (বর্তমানে আমেরিকা প্রবাসী), মেঝবাহ উদ্দীন চন্টু ওরফে চন্টু মেম্বার (ক্রসফায়ারে নিহত), চঞ্চল (সৌদি থেকে ফিরে এসে মানষিক ভারসাম্যহীন) ও ঢাকায় যার বাসার উদ্দেশ্যে বাড়ি হতে বের হয়েছিলো সেই মাহফুজ আনাম অনেকটা খেয়ালীপনায় মধ্যদিয়ে স্থানীয় এক অবসরপ্রাপ্ত সরকারী বিদ্যালয়ের শিক্ষকের সহচার্যে ১৯৯২ সালে এইচএসসি পরীক্ষার পর অবকাশ সময়ে বন্ধুদের সাথে চলে যায় তাবলীগ জামায়াতে। সেখান থেকে ফিরে এসে কিছুদিন লম্বা দাড়ি, টুপি-পাঞ্জাবী পরিধান করে তারা। কিছুদিন পার না হতেই আমেরিকা প্রবাসী হাসান সমীর ও চঞ্চল দাড়ি-টুপি বাদ দিয়ে পূর্বের পরিবেশে ফিরে যায়। কিন্তু ফিরতে পারেনি নাজিম, চন্টু ও মাহফুজ। এভাবেই চলতে থাকে কয়েক বছর। সূত্র জানায়, ১৯৯৬ সালে আফগানিস্থানে গৃহযুদ্ধ শুরু হলে বাংলাদেশ হতে যে ক’জন জেহাদী আল-কায়দার তালেবান যোদ্ধা হিসেবে প্রশিক্ষণ নিতে আফগানিস্থান গিয়েছিলো নাজিম তাদের মধ্যে অন্যতম। সূত্র আরো জানায়, তিন চিল্লার নাম করে বাড়ি থেকে বের হয়ে কয়েকমাস নিরুদ্দেশ হয় নাজিম। এর পর মণিরামপুর ফিরে এসে হরকাতুল জিহাদের (হুজি) মিছিলে নেতৃত্ব দিয়ে বেশ আলোচনায় আসে সে। এরপর পৌরশহরে আল-এখওয়ান লাইব্রেরী নামে একটি বুকস্টল দিয়ে শুরু করে ব্যবসা। এরইমধ্যে ১৯৯৭ সালে জালঝাড়া গ্রামের নাজমা খাতুন নামের এক মেয়েকে বিয়ে করে। বিয়ের কিছুদিন পর বইয়ের ব্যবসা বাদ দিয়ে শুরু করে পাঞ্চাবী তৈরীর কারখানা। নাম দেয় নকশা পাঞ্জাবী হাউজ। মূলত: তখন থেকেই সে মণিরামপুরে “নকশা নাজিম” নামে পরিচিত হয়ে ওঠে। বছর দু’য়েক পাঞ্জাবী তৈরীর কাজ করে সে ব্যবসাটিও বাদ দেয়। এর পরপরই শুরু করে কম্পিউটার প্রশিক্ষণ, ডিজাইন ও কম্পোজের ব্যবসা। এব্যবসা প্রতিষ্ঠানটির নামও দেয় নকশা কম্পিউটার। ইতিমধ্যে নাজিম-নাজমা দম্পতির ঘরে আসে তুবা ও তৈয়েবা নামের দুই কণ্যা সন্তান। অতি অল্প সময়ে উপজেলার গন্ডি ছাড়িয়ে ব্যপক পরিচিত হয়ে ওঠে নকশা কম্পিউটার। মূলত: নকশা কম্পিউটারে বসেই ইন্টানেটের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক জঙ্গি নেটওয়ার্কের সাথে সম্পর্ক গড়ে ওঠে নাজিমের। ২০১০ সালের শেষের দিকে জমজমাট ব্যবসায়ীক প্রতিষ্ঠান নকশা কম্পিউটার উপজেলা যুবদল সভাপতি আসাদুজ্জামান মিন্টুর নিকট বিক্রি করে দিয়ে ঢাকায় চলে যায় সে। হঠাৎ একদিন দাড়ি কেটে ক্লিনসেভ করে, টুপি ছেড়ে জিন্স প্যান্ট আর গেঞ্চি পরে মণিরামপুরে আসে নাজিম। জানায়, ঢাকায় একটি কোম্পানীতে চাকরি নিয়েছে। কিছুদিন পর চলে যায় মালেয়শিয়া। প্রায় বছর তিনেক পর আবারো ফিরে আসে দেশে। দেশে এসে বড় মেয়ে তুবাকে বিয়ে দেয় খানপুরের এক ছেলের সাথে। এবার ঢাকার একটি হজ্জ্ব এজেন্সিতে চাকরি নেয় সে। চাকরি করাকালীন সময়ে ঢাকায় বসবাসরত বন্ধু মাহফুজের বাসায় অবস্থান করতো। সেখানে মাত্র মাস চারেক চাকরি করে সেটা ছেড়ে দিয়ে বন্ধু মাহফুজের বাসায় অবস্থান করতে থাকে। সেখানে থাকা অবস্থায় নিখোঁজ হয় নাজিম। নিঁখোজের পর তার পরিবারের পক্ষ থেকে একাধিক সংবাদ সম্মেলন করে দাবি করা হয়, গত ২৫ মে সকালে ব্যবসায়ীক কাজে গাউসুল আযম নামের এক বন্ধুর ফোন পেয়ে বন্ধু মাহফুজের বাসা থেকে বের হয়ে নিঁখোজ হয় নাজিম। এব্যাপারে রাজধানীর ভাটারা থানায় একটি ডায়েরী করে তার স্ত্রী। গত মাস দু’য়েক আগে যশোর জেলা পুলিশ যশোরের সেরা পাঁচ জঙ্গি তালিকা প্রকাশ করে। তাতে নাজিমের ছবি প্রকাশ করা হয়। সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার রাতে চট্টগ্রামে র্যাবের অভিযানে আটক পাঁচ জঙ্গির মধ্যে নাজিমকে দেখা গেলে পৌরশহরে সেটি টক অব দ্য টাউনে পরিণত হয়।
যেভাবে জঙ্গি হয়ে ওঠে মণিরামপুরের নাজিম ওরফে নকশা নাজিম
চট্টগ্রামে আটক পাঁচ জঙ্গির মধ্যে যশোরের মণিরামপুরের নাজিম উদ্দীন আল আজাদ ওরফে নকশা নাজিম ছোট বেলা থেকেই ছিলো অনেকটা ডানপীটে। স্কুল-কলেজ পড়ুয়া নাজিম খুব অল্প সময়ের মধ্যে ধর্মীয় অনুশানের প্রতি দূর্বল হয়ে পড়ে। নাজিমের পিতা উপজেলার ভরতপুর গ্রামের হাসান গাজী ছিলেন স্থানীয় জনতা ব্যাংকের নাইটগার্ড। তার ১ মেয়ে আর ২ ছেলের মধ্যে নাজিম মেঝ। ভাই বোনের মধ্যে সবার বড় বোন বিবাহিত। ভাইদের মধ্যে নাজিম বড়। অপর ছোট ভাই আজিম ভাড়ায় মোটরসাইকেল চালায়। ছাত্রদলের রাজনীতির সাথে জড়িত বাজারে উগ্রতার সাথে চলাফেরা করা ছেলে নাজিম হঠাৎ করেই ধর্মীয় অনুশাসনে বন্দি হয়ে পড়ে। বন্ধু হাসান সমীর (বর্তমানে আমেরিকা প্রবাসী), মেঝবাহ উদ্দীন চন্টু ওরফে চন্টু মেম্বার (ক্রসফায়ারে নিহত), চঞ্চল (সৌদি থেকে ফিরে এসে মানষিক ভারসাম্যহীন) ও ঢাকায় যার বাসার উদ্দেশ্যে বাড়ি হতে বের হয়েছিলো সেই মাহফুজ আনাম অনেকটা খেয়ালীপনায় মধ্যদিয়ে স্থানীয় এক অবসরপ্রাপ্ত সরকারী বিদ্যালয়ের শিক্ষকের সহচার্যে ১৯৯২ সালে এইচএসসি পরীক্ষার পর অবকাশ সময়ে বন্ধুদের সাথে চলে যায় তাবলীগ জামায়াতে। সেখান থেকে ফিরে এসে কিছুদিন লম্বা দাড়ি, টুপি-পাঞ্জাবী পরিধান করে তারা। কিছুদিন পার না হতেই আমেরিকা প্রবাসী হাসান সমীর ও চঞ্চল দাড়ি-টুপি বাদ দিয়ে পূর্বের পরিবেশে ফিরে যায়। কিন্তু ফিরতে পারেনি নাজিম, চন্টু ও মাহফুজ। এভাবেই চলতে থাকে কয়েক বছর। সূত্র জানায়, ১৯৯৬ সালে আফগানিস্থানে গৃহযুদ্ধ শুরু হলে বাংলাদেশ হতে যে ক’জন জেহাদী আল-কায়দার তালেবান যোদ্ধা হিসেবে প্রশিক্ষণ নিতে আফগানিস্থান গিয়েছিলো নাজিম তাদের মধ্যে অন্যতম। সূত্র আরো জানায়, তিন চিল্লার নাম করে বাড়ি থেকে বের হয়ে কয়েকমাস নিরুদ্দেশ হয় নাজিম। এর পর মণিরামপুর ফিরে এসে হরকাতুল জিহাদের (হুজি) মিছিলে নেতৃত্ব দিয়ে বেশ আলোচনায় আসে সে। এরপর পৌরশহরে আল-এখওয়ান লাইব্রেরী নামে একটি বুকস্টল দিয়ে শুরু করে ব্যবসা। এরইমধ্যে ১৯৯৭ সালে জালঝাড়া গ্রামের নাজমা খাতুন নামের এক মেয়েকে বিয়ে করে। বিয়ের কিছুদিন পর বইয়ের ব্যবসা বাদ দিয়ে শুরু করে পাঞ্চাবী তৈরীর কারখানা। নাম দেয় নকশা পাঞ্জাবী হাউজ। মূলত: তখন থেকেই সে মণিরামপুরে “নকশা নাজিম” নামে পরিচিত হয়ে ওঠে। বছর দু’য়েক পাঞ্জাবী তৈরীর কাজ করে সে ব্যবসাটিও বাদ দেয়। এর পরপরই শুরু করে কম্পিউটার প্রশিক্ষণ, ডিজাইন ও কম্পোজের ব্যবসা। এব্যবসা প্রতিষ্ঠানটির নামও দেয় নকশা কম্পিউটার। ইতিমধ্যে নাজিম-নাজমা দম্পতির ঘরে আসে তুবা ও তৈয়েবা নামের দুই কণ্যা সন্তান। অতি অল্প সময়ে উপজেলার গন্ডি ছাড়িয়ে ব্যপক পরিচিত হয়ে ওঠে নকশা কম্পিউটার। মূলত: নকশা কম্পিউটারে বসেই ইন্টানেটের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক জঙ্গি নেটওয়ার্কের সাথে সম্পর্ক গড়ে ওঠে নাজিমের। ২০১০ সালের শেষের দিকে জমজমাট ব্যবসায়ীক প্রতিষ্ঠান নকশা কম্পিউটার উপজেলা যুবদল সভাপতি আসাদুজ্জামান মিন্টুর নিকট বিক্রি করে দিয়ে ঢাকায় চলে যায় সে। হঠাৎ একদিন দাড়ি কেটে ক্লিনসেভ করে, টুপি ছেড়ে জিন্স প্যান্ট আর গেঞ্চি পরে মণিরামপুরে আসে নাজিম। জানায়, ঢাকায় একটি কোম্পানীতে চাকরি নিয়েছে। কিছুদিন পর চলে যায় মালেয়শিয়া। প্রায় বছর তিনেক পর আবারো ফিরে আসে দেশে। দেশে এসে বড় মেয়ে তুবাকে বিয়ে দেয় খানপুরের এক ছেলের সাথে। এবার ঢাকার একটি হজ্জ্ব এজেন্সিতে চাকরি নেয় সে। চাকরি করাকালীন সময়ে ঢাকায় বসবাসরত বন্ধু মাহফুজের বাসায় অবস্থান করতো। সেখানে মাত্র মাস চারেক চাকরি করে সেটা ছেড়ে দিয়ে বন্ধু মাহফুজের বাসায় অবস্থান করতে থাকে। সেখানে থাকা অবস্থায় নিখোঁজ হয় নাজিম। নিঁখোজের পর তার পরিবারের পক্ষ থেকে একাধিক সংবাদ সম্মেলন করে দাবি করা হয়, গত ২৫ মে সকালে ব্যবসায়ীক কাজে গাউসুল আযম নামের এক বন্ধুর ফোন পেয়ে বন্ধু মাহফুজের বাসা থেকে বের হয়ে নিঁখোজ হয় নাজিম। এব্যাপারে রাজধানীর ভাটারা থানায় একটি ডায়েরী করে তার স্ত্রী। গত মাস দু’য়েক আগে যশোর জেলা পুলিশ যশোরের সেরা পাঁচ জঙ্গি তালিকা প্রকাশ করে। তাতে নাজিমের ছবি প্রকাশ করা হয়। সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার রাতে চট্টগ্রামে র্যাবের অভিযানে আটক পাঁচ জঙ্গির মধ্যে নাজিমকে দেখা গেলে পৌরশহরে সেটি টক অব দ্য টাউনে পরিণত হয়।
0 comments: