মাসুমা আক্তার পলি
আমার সাথে কিছুদিন আগে এক অফিসার এর সাথে পরিচয় হলে, যখন আমি বললাম আমি একজন পলিটিশিয়ান...ছাত্রনেত্রী। তখন সে এমনভাবে নাক-মুখ-চোখ কুচকাল যেন আমি একজন ভয়ংকর ক্রিমিনাল, চরিত্রহীন, লম্পট, খারাপ লোক। সে যেহেতু ভদ্রলোক, তাই মুখের উপর ভদ্রতা বশত কোন খারাপ মন্তব্য করল না, মনে মনে আমার চৌদ্দ গুষ্ঠি ধুয়ে দিল।
মুচকি হেসে শুধু বলল ভালই তো আছেন, আয় ইনকাম তো ভালই কি বলেন?
ইনকাম কিসের বলতেই ভদ্রলোক বললেন অমন সবাই বলে আবার সুযোগ পেলে কে না সুবিধা নেয়? ব্যাপার না। তারপর শুরু করল ওমুক নেতা এত খারাপ, মন্ত্রী-এমপিরা এত খারাপ।
তখন আমি তাকে বললাম আপনার কাছে ডাক্তাররা কেমন?
সাক্ষাৎ কষাই মিয়া, একেবারে ডাকাত।
পুলিশদের কেমন লাগে?
ফেরেপবাজ, চামার। পুলিশে ছুলে তার আর রক্ষা নাই।
আমলা?
ঘুষখোর, চোগলখোর, দূর্নীতিবাজ।
সাংবাদিক?
মিথ্যাচারী, লম্পট, বদমাশ, হলুদ সাংবাদিকে দেশটা ভরেে গেছে।
শিক্ষক?
চাঁদাবাজ, কোচিংবাজ। সবাই খারাপ বুঝলেন, সমাজটা এক্কেবারে পচে গেছে।
আমি বললাম ও আচ্ছা।
তো ভদ্রলোক কিছুদিন পরেই ফোন করে বললেন আপা আপনার কলেজে আমার ভাগনিকে ভর্তি করে দিতে পারবেন কি? টাকা পয়সা কোন ব্যাপার না।
আমি বললাম জননেত্রী শেখ হাসিনার এই দেশে ভর্তি বাণিজ্য চলে না। এই প্রথম বলল তা অবশ্য ঠিক বলছেন।
আসলে আমাদের চারপাশে এমন ভণ্ড লোকই বেশি।
আমাদের মন-মানসিকতা কেমন, সেটা বুঝা যায় আমরা নিয়মিত কোন বিষয় গুলো চর্চা করি সেটার উপর। গীবত করে আমরা বড়ই আনন্দিত হই। হয়তো নির্দিষ্ট কারও আচরণ আপনার কাছে খারাপ লেগেছে, তাকে পছন্দ নাই করতে পারেন। এটা হতেই পারে। জগতের সবাই নিশ্চয় সবাইকে পছন্দ করবে না। তা বলে ঢালাও ভাবে সবার চরিত্র হননে আপনি উঠে পড়ে লাগবেন। কোনো সভ্য সমাজে এই ধরনের প্র্যাকটিস গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।
আমরা আসলে কারো ভালো দেখতে পারি না। কেউ একটু বড় হয়ে গেলে, একটু ভালো কিছু করলে আমাদের গায়ে লাগে। কিভাবে তাকে টেনে নিচে নামানো যায়, তাকে ছোট করা যায়, এই চিন্তায় আমরা নিজেদের ঘুম`ই বাদ দেই! অথচ চেষ্টা করলে যে নিজেও বড় হওয়া যায় সেই চিন্তা আমাদের মাথায় আসে না। জগতের এমন কি অতি খারাপ কিছু থেকেও যে ভালো কিছু নেয়া সম্ভব, সেটা আমরা নিতে চেষ্টা করি না।
এ থেকেই বুঝা যায় জাতিগত ভাবে আমরা এখনো সভ্য হতে পারিনি। সভ্যতা এখনো আমাদের থেকে হাজার মাইল দূরে! আমরা কেবল খারাপ`টাই নিতে এবং ভাবতে শিখেছি!
যারা অন্যের ভাল কোন ভাবেই দেখতে পারে না। অন্যের ভাল কিছু করা, খাওয়া, পরা যা দেখে তাতেই এদের শরীর জ্বালা করে, হিংসায় চোখ ভরে উঠে। তাই তারা দু`একজন খারাপ মানুষের সথে তুলনা করে সকলকে খারাপ প্রমাণ করতে চায়, সমালোচনায় চারপাশ মুখর করে তোলে।
"""আমরা যারা রাজনীতিবিদ তারা যেন এ সমস্ত ভণ্ডদের কথায় প্রভাবিত না হই। এরা রাজনীতিবিদদের চরিত্র হননে, মনোবল হননে সদা লিপ্ত। এদের কারণে মেধাবীরা রাজনীতিতে আসতে চায় না। মেধাবীদের রাজনীতিতে আসতেই হবে। কারন মেধাবীরা রাজনীতিতে না এলে সমাজের অযোগ্য, খারাপ, মেধাহীন লোকেরা রাজনীতিতে জায়গা করে নিবে। নষ্ট করবে রাজনীতির পরিবেশ আর দেশের পুরো সিস্টেম।""""
বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি মাসুমা আক্তার পলি`র ফেসবুক থেকে নেওয়া
0 comments: