Monday, July 25, 2016

যশোরে পুলিশের জঙ্গি তালিকা :স্বেচ্ছায় থানায় গিয়ে মুন্না এখন পুলিশ হেফাজতে

মণিরামপুর কণ্ঠ ডেক্স।।

 যশোরের কামরুজ্জামান তুহিন ওরফে মুন্নাকে পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। জঙ্গি তালিকায় নাম থাকায় সোমবার দুপুরে আত্মীয়-স্বজন ও এলাকাবাসীকে সঙ্গে নিয়ে মুন্না কোতোয়ালী থানায় হাজির হন। পরে সেখানে পুলিশ সুপার আসেন।

পুলিশ সুপার জানান, মুন্নার অজ্ঞাতবাস সম্বন্ধে খোঁজ-খবর নেওয়া হবে। তারপর আইনগত ব্যবস্থা নাকি পরিবারের হাতে ফেরত দেওয়া হবে তা নির্ধারণ করা হবে।

এর আগে ভোরে ঢাকা থেকে সস্ত্রীক যশোর শহরের শংকরপুর এলাকার বাসায় ফেরেন কামরুজ্জামান তুহিন ওরফে মুন্না। তিন বছর ধরে নিখোঁজ থাকা পুলিশ যশোরের যে পাঁচজনকে জঙ্গি তৎপরতায় যুক্ত বলে সাব্যস্ত করে পোস্টার করেছে, মুন্না সেই তালিকায় শীর্ষে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বেলা ১২টার দিকে মুন্না কোতোয়ালী থানায় আসেন। তার সঙ্গে মা-ভাই, মামা ছাড়াও আত্মীয়-স্বজন ও প্রতিবেশীরা ছিলেন।

দুপুর ১টার দিকে পুলিশ সুপার আনিসুর রহমান থানায় আসেন। এসময় তিনি থানার অফিসার, মুন্না ও তার স্বজনদের সঙ্গে কথা বলেন।

সাংবাদিকদের উপস্থিতিতে পুলিশ সুপার আনিসুর রহমান বলেন, পুলিশের তালিকাভুক্ত যে ৫ জনের জঙ্গি সংশ্লিষ্টতা থাকতে পারে বলে প্রকাশ করা হয়, তাদের মধ্যে মুন্নার নামও রয়েছে। সেই সময় দুই জনের পরিবারের পক্ষ থেকে পুলিশের সহায়তা কামনাকারীদের একজন মুন্নার বাবা।

তিনি বলেন, গত দুই বছর মুন্না যে সব জায়গায় ছিল তা তদন্ত করে দেখা হবে। পুলিশের পাশাপাশি সরকারের অন্য সংস্থাগুলোও তা খতিয়ে দেখবে। যদি সে নির্দোষ হয় তবে, পুলিশ তাকে পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেবে। আর যদি তার জঙ্গি সম্পৃক্ততা থাকে তবে সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী তাকে আইনগত সহায়তা এবং কাউন্সিলিংয়ের ব্যবস্থা করা হবে। যেহেতু সে নিজেই ফিরে এসেছে বিষয়টি গুরুত্ব দিয়েই ভাবা হবে। পরবর্তী ব্যবস্থা না নেওয়া পর্যন্ত মুন্না পুলিশি হেফাজতে থাকবে বলে তিনি জানান।


কোতোয়ালি থানায় মুন্নার বিষয়ে সাংবাদিকদের সাথে কথা বলছেন পুলিশ সুপার আনিসুর রহমান
মুন্নার বাবা আবদুস সোবহান বলেন, ‘সারাদেশে জঙ্গি তৎপরতা শুরুর পর স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর আওয়ামী লীগ নেতা গোলাম মোস্তফা তাকে ছেলে নিখোঁজের ব্যাপারে সাধারণ ডায়েরি করতে থানায় নিয়ে আসেন। সে অনুযায়ী থানায় জিডি করা হয়।’

মুন্নার ছোটভাই যশোর সরকারি মাইকেল মধুসূদন কলেজের ছাত্র আবদুল আহাদ জানান, জিডিতে তারা যা লিখতে চেয়েছিলেন, পুলিশ তা গ্রহণ করেনি। পুলিশ ইচ্ছা মতো জিডি লিখেছে, যেখানে হয়তো তার ভাইকে জঙ্গি হিসেবে সাব্যস্ত করা হয়েছে।

থানায় অবস্থানকালে মুন্না সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘মা আমার মুখ দেখতে না চাওয়ায় ক্ষোভে-অভিমানে বাড়ি ছেড়ে ঢাকায় চলে যাই। সেখানে কাজ-কর্ম করে জীবন চালাচ্ছিলাম। এরমধ্যে ইয়াসমিন আক্তার নামে একটি মেয়ের সঙ্গে পরিচয় ও প্রেম। পরে তাকে বিয়ে করি।’

সম্প্রতি স্ত্রীকে বাড়িতে আনার জন্য তিনি মায়ের কাছে ফোন করেন। মা তার কণ্ঠ শুনে কান্নাকাটি করেন। পরে ছোটভাই আহাদকে বিয়ের কথা বলেন। তখন সে ঠিকানা জানতে চায়। ঠিকানা বলার পর তার বাবা ঢাকায় ছুটে আসেন এবং মুন্নাকে সস্ত্রীক যশোরে নিয়ে আসেন।

আহাদ বলেন, ‘ভাই ফিরে আসায় আমরা পরিবারের পক্ষ থেকে আরেকটি জিডি করতে চাই। জিডি লিখেও এনেছি। কিন্তু ডিউটি অফিসার জিডি নিচ্ছেন না। ওসি সাহেব থানায় না থাকায় ডিউটি অফিসার এখন জিডি নিতে পারবেন না বলে জানিয়ে দিয়েছেন।’

প্রসঙ্গত, গত ২১ জুলাই যশোর পুলিশ জানিয়েছিল যশোরে ১১৪ জন নিখোঁজ। যাদের প্রায় সবারই বিষয়ে সংশ্লিষ্ট থানায় জিডিই করা রয়েছে। এদের মধ্যে ৫ জন বিভিন্ন জঙ্গি গোষ্ঠীর সঙ্গে সম্পৃক্ত বলে জানিয়েছে পুলিশ। মুন্না তাদেরই একজন।

জঙ্গি গোষ্ঠীর সঙ্গে সম্পৃক্ত যে পাঁচজনের তালিকা পুলিশের কাছে রয়েছে তারা হলেন- যশোর শহরের শংকরপুর গোলপাতা মসজিদ এলাকার আব্দুস সোবহানের ছেলে কামরুজ্জামান তুহিন ওরফে মুন্না (২৪), যশোর সদরের কিসমত নওয়াপাড়া এলাকার কাজী হাবিবুল্লাহর ছেলে ফজলে রাব্বী (২১), শার্শা উপজেলার শ্যামলাগাছি এলাকার আওরঙ্গজেবের ছেলে মেহেদি হাসান জিম (১৯), মণিরামপুর উপজেলার দুর্গাপুর এলাকার হাসান আলী গাজীর ছেলে জিএম নাজিমউদ্দিন ওরফে নকশা নাজিম (৪২) এবং যশোর শহরের ধর্মতলা এলাকার আব্দুস সালামের ছেলে রায়হান (২১)।

0 comments: